ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদ গড়ার একাধিক অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বিরামপুর গ্রামের মৃত ছাদেক আলীর ছেলে।
জানা যায়, হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার। কিন্তু হঠাৎ করেই বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক। এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনা কল্পনা। অনুসন্ধানে উঠে আসে, ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার এর কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র কোর্টপাড়ায় রয়েছে নিজস্ব বিলাশ বহুল ফ্যাট, হাউজিং ডি ব্লকে নির্মানাধীন ৭ তলা ভবনের ৫ তলার নির্মান কাজ চলছে, ঢাকায় মিরপুর পীরেরবাগে জামায়াত টাওয়ার নামে পরিচিত সকল জামায়াত নেতারা মিলে সেভেনটি ওয়ান টাওয়ার নামে যে ভবন করেছেন সেখানেও দুই কোটি টাকা মুল্যের দু’টি ফ্যাট। এই শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আব্দুস সাত্তারের নিজস্ব ৭টি ট্রাক, ১টি হাইচ, মিরপুর উপজেলায় চলছে ব্যাংকের নিয়মনীতি উপো করে অন্যনামে এজেন্ট ব্যাংকিং সহ বহুবিধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। একজন ব্যাংকারের এত অর্থ সম্পদ ভাবতে অবাক হয় সাধারণ মানুষ। যেখানে ব্যাংকের বড় বড় কর্মকর্তারা আর্থিক টানা পোড়েনের মধ্যে দিনাতিপাত করেন সেখানে আব্দুস সাত্তারের মতো বিলাস বহুল এবং অর্থ সম্পদের পাহাড়ে হাবুডুবু খাওয়ার পেছনে রহস্য কি? এদিকে সরেজমিনে তার নিজ গ্রাম মালিহাদ ইউনিয়নের বিরামপুরে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংক ভেড়ামারা শাখার ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। বাড়ির চারিপাশে লাগিয়েছেন অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুস সাত্তারের বড়ভাই মসজিদের ইমাম সাজাহান এর নামে মোড়ে মোড়ে রয়েছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার এর অবৈধভাবে উপাার্জিত অর্থ ব্যবহার করে বড়ভাই সাজাহান কুর্শা বাজারে মেসার্স ইমন ট্রেডার্স নামে বিভিন্ন বড়বড় প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ নিয়ে গড়ে তুলেছেন রড় সিমেন্ট গ্যাস ও কীটনাশকের বিশাল কারবার। মেসার্স ইমন সীডস নামের একটি প্রতিষ্ঠান করে খুলনা বিভাগে একক ভুট্টা আমদানীকারক হিসেবে ভারত থেকে নিয়মিত ভুট্টা বীজ আমদানী করছে। এছাড়াও কুর্শা বাজারে রয়েছে আরো ৬টি বৃহৎ আকারের গোডাউন। তার নিজ গ্রামে ৩০-৩৫বিঘা ফসলি জমির উপর রয়েছে এ.এফ.এ.বি ব্রিকস ফিল্ড নামের ইটভাটা। কাকিলাদহ গ্রামের ফকির মোড়ে ৬তলা ফাউন্ডেশনের বিল্ডিংয়ের নীচতলায় সাত্তারের ভাই সাজাহান এবং ইয়াদুদ এর পরিচালনায় রয়েছে সিমেন্ট, রড় ও বীজের বিশাল গোডাউন। পাশেই রয়েছে সাজাহানের পাটের ও গ্যাস সিলিন্ডারের দুইটি গোডাউন।
এই সকল ব্যবসা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইয়াদুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাত্তারের চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা বাজারে রয়েছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গোডাউন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার ভেড়ামারাতে যোগদানের পর তার বড়ভাই যেনো রাতারাতি এলাকায় শিল্পপতি বনে গেছেন। অত্র এলাকায় আরো অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকার ও চাকুরীজীবি রয়েছেন। তবে সাত্তারের সহযোগিতায় তার বড়ভাই সাজাহান যতদ্রুত আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন, এমন আর কেউ হতে পারেনি। স্থানীয়রা আরো জানায়, সাত্তারের ভাই সাজাহান মাত্র কয়েকবছর আগেও একটি ছোটো দোকানের মালিক ছিলেন। সাত্তার ব্যাংকে যোগদানের পর সাজাহান একাধিকবার বিদেশভ্রমন সহ এই বিপুল পরিমান অর্থের মালিক বনে গেছেন। যার পরিমান প্রায় ১ কোটি টাকা। এই অবৈধ সম্পদকে বৈধ করতে সাত্তার তার ভাইয়ের নামে আলমডাঙ্গার একটি ব্যাংক থেকে অর্ধকোটি টাকা ঋনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এদিকে সাত্তার এর স্ত্রী রাবেয়া খাতুনের সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে জানা যায়, সাত্তার তার অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে স্ত্রী রাবেয়া কে ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ভাবে। সাত্তারের স্ত্রী রাবেয়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাগুরা জেলা জজ কোর্টে একাধিক মামলা করেছে ভুক্তভোগীরা, নি¤েœ মামলা নন্বর তুলে ধরা হলো, দেওয়ানী মামলা (মাগুরা বিজ্ঞ সদর সহকারী জজ আদালত – ২৪/২০১৭), (বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত মাগুরা পি-১০২/২০১৮, কাঃ বিঃ- ১৪৪/৪৫), (বিজ্ঞ ডিসি কোর্ট মাগুরা সদর ২৩ ০৩৩ তারিখ- ১৩/০৬/২০১৩ ), (বিজ্ঞ ডিসি কোর্ট মাগুরা সদর ২০ ৯০৭ তারিখ-৯/১২/২০১২), (বিজ্ঞ মাগুরা সদর কোর্ট মোকামঃ দঃ বিঃ সিআর-২৪৫/২০১৭, ধারা- ৩২৩/৩৮৫/৩০৭/১৮৮/১১৪), (বিজ্ঞ মাগুরা সদরকোর্ট- পি ৩৪৪/২০২১, ধারা-১৪৪/৪৫) ফৌঃ কাঃ বিঃ বিজ্ঞ অতিরিক্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাগুরার স¦ারক নম্বর-৫৫১(২) তারিখ-২৯/০৭/২০২১।
এ বিষয়ে ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার এর বড়ভাই সাজাহান এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, এমনকি ব্যবসায়ীক কোনো সম্পর্কও নেই। আমি ব্যাংকের ঋণের টাকায় ব্যবসা করি। পূর্বে আমার ৭লক্ষ টাকা ঋণ ছিলো, বর্তমানে আমার ৯৫লক্ষ টাকা ব্যাংকে ঋণ রয়েছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার ও তার বড়ভাই সাজাহানের এই অবৈধ সম্পদের বিষয়ে দুদক ও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে।