খন্দকার জালাল উদ্দীন : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর চরে একসময়ের অনাবাদি জমিতে এখন আবাদ হচ্ছে বাদাম। আবহাওয়া অনুকূল এবং মুনাফা বেশি পাওয়ায় এসব জমিতে উচ্চ ফলনশীল বাদাম আবাদ করছেন চাষিরা। এখন তাঁরা বাদাম তোলার কাজ করছেন। অর্থকরী ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারালেও স্বল্প সময়ে বিকল্প এ ফসল চাষে লাভের মুখ দেখছেন চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকেরা। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এসব জমির কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব স্বল্প সময়ের ফসলের দিকে ঝুঁকছেন তাঁরা। উন্নত প্রযুক্তি, ঋণসুবিধাসহ উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলে এখানকার উৎপাদিত বাদাম গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা এ অঞ্চলের কৃষকদের। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবার উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, ফিলিপনগর ও মরিচা চরে ৮৯০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ১০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ বেড়েছে। চরের মাটিতে পাথর ও বালু বেশি থাকায় এ অঞ্চলে বাদামের ফলন ভালো হয়। কৃষকেরা জানান, বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে ৫ থেকে ৬ মণ পর্যন্ত বাদাম উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মণ বাদামের পাইকারি দাম ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ায় বাদাম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তাঁরা। সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অবশ্য হতাশার কথা জানিয়েছেন অনেকে। তাঁরা বলেন, দেশীয় খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানাগুলো তাঁদের কাছ থেকে বাদাম সংগ্রহ করলে তাঁরা আরও বেশি লাভবান হবেন। এ বিষয়ে কথা হয় ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকার বাদামচাষি রানা হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার ২০ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। ১২০ মণের মতো বাদাম পাব।’ এ বছর বাদামের ফলন ভালো না হলেও ভালো দাম পাওয়ার কথা জানান তিনি। রানা জানান, তাঁর মতো অনেক বড় বড় বাদাম চাষি আছেন এ চরে। তবে তাঁরা সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আরেক চাষি ওদিদুল ইসলাম জানান, নদীতে বন্যার পানি আসার আগেই চরের সব বাদাম চাষিদের ঘরে চলে আসবে। আর স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ায় বাদাম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘লাভবান হওয়ায় উপজেলার চার চরে এ বছর প্রায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। উৎপাদিত ফসলের সন্তোষজনক দাম এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে চাষিদের সহায়তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি সব ধরনের সহায়তা করা হয় তাঁদের।’ চাষিরা দেশীয় খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোর কাছে বাদাম বিক্রি করতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।