খন্দকার জালাল উদ্দীন : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভ্যান চুরির মিথ্যা অপবাদে পিটিয়ে আহত করা ও জরিমানার টাকা দেওয়া সইতে না পেরে পচু মন্ডলের ছেলে নয়ন (২০) নামে এক যুবক চেতনানাশক ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার সকাল ৭টার দিকে নিজ ঘরের দরজা ভেঙ্গে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত নয়ন উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর কারিগরিপাড়া গ্রামের পচু মন্ডলের ছেলে।
ঘাতক রফিক
নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর ও স্থানীয়রা জানান, মথুরাপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের জমিরের ছেলে শাহাব ও নয়ন এক সংগে গাঁজা সেবন করতে যাই, সেখানে শাহাবের ভ্যান চুরি হয়। ভ্যান চুরির ঘটনা নিয়ে ৭ নভেম্বর রাতে মৃত জসিম উদ্দীনের ছেলে মুদিও ব্যবসায়ী পুলিশের সোর্স ও মাদক-চোরাচালান ৫২ মামলার সাক্ষী রফিক এর নেতৃত্বে শালিস মিমাংসায় বসে এলাকার
কম্পিউটার ব্যবসায়ী সামিউল, কুদ্দুসের ছেলে রতন,রাসেল, সালাম, লিটন, হাফিজুর দেওয়ান সহ ৮/১০জন মন্ডল মাতুব্বর। এসময় ভ্যান চুরির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ঘটনাস্থলে রফিক দালালের নেতৃত্বে নয়নকে বেধড়ক মারপিট করে মারাত্বক আহত করে শালিস মিমাংসায় অংশ নেওয়া লোকজন, তাকে পরে দৌলতপুর হাসপাতালে ভর্তি করও, সেখানে ৭ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর নয়নকে বাড়িতে নিয়ে আসে গত ১৩ নভেম্বর । ভ্যান উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলেও তার বাবার কাছে মামলার ভয় দেখায়ে জরিমানা আদায় করে ৮ হাজার টাকা।
বাদীপক্ষ জানায় মার পিটের ঘটনায় তারা থানা একটি অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ বিষয়টি আমলে নেয় নাই। বাদীপক্ষ আরো জানাই আসামী রফিক পুলিশের লোক, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করলে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হব। এ বিষয় নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। চুরি না করেও ভ্যান চুরির অপবাদ ও জরিমানা সইতে না পেরে নয়ন ১৪ নভেম্বর সোমবার সকালে নিজ ঘরের ভেতরে নয়নের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, কীটনাশক পানে নয়ন নামে এক যুবকের মৃত্যু হলে তার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
মারধরের একপর্যায়ে নয়ন অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় থানার দালাল খ্যাত রফিক নয়নের বাড়িতে ফোন দিয়ে তাকে নিয়ে যেতে বলে। পরে নয়নের অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন দৌলতপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন ও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখেন। পরে নয়নের অবস্থা উন্নতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। নয়ন পেশায় একজন ভ্যান চালক ছিলেন, এবং ভ্যান চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে থালা বাসন মাজার কাজ করতেন। সংসার জীবনে তার ছয় মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে ।
নয়নের বাবা পচু মন্ডল বলেন, আমার ছেলে কোন অবস্থাতেই কোন প্রকার চুরির সাথে জড়িত থাকতে পারে না। ইতিপূর্বে এধরনের কোনো অভিযোগও আমাদের কাছে আসেনি, কিন্তু ১৫/১৬ দিন আগে এক রাত্রে আমার ছেলেকে রফিক দালাল, সামিউল , রাসেল, সালাম, লিটন, সহ সব মিলিয়ে ১০/১২ জন লোক বাড়িতে এসে আমার ছেলে নয়ন কে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তারা নয়নকে চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করে। আমি অনেকটা বাধ্য হয়েই টাকা দিতে স্বীকৃতি জ্ঞাপন করি এবং তার কিছু দিন পরে তারা আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে আমার ছেলে নয়নকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলে ১৩ তারিখ রাত আনুমানিক ১১ থেকে সকাল ৬ টার মধ্যে যে কোন সময় মনের দুঃখে ক্ষোভে পড়ে চুরির অপবাদ সইতে না পেরে চেতনানাশক ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে। এদিকে এলাকাবাসী জানান, রফিক দালালসহ এলাকার সংঘবদ্ধ একটি চক্র বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষ জনকে হয়রানি মূলক অপবাদ দিয়ে বিচার সালিশের নামে অর্থ আদায় করে থাকে। যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায় এলাকায় বসবাসরত শান্তিপ্রিয় জনগণ।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান জানান, এজাহার পেয়েছি প্রাথমিকভাবে পুলিশ তদন্ত করছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সম্পাদক : খন্দকার জালাল উদ্দিন
সম্পাদকীয় কার্যালয়: খন্দকার সুপার মার্কেট , (২য় তালা ) আল্লারদর্গা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া ।
মোবাইল : ০১৭১৮-১৬৪২৬৬, ই-মেইল: uddinjalal030@gmail.com
ই-পেপার কপি