ঘাতক রফিক
খন্দকার জালাল উদ্দীন : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ২ নং মথুরাপুর ইউনিয়নের মহাদেব পুর কান্দির পাড়া এলাকার পচু মন্ডলের ছেলে নয়নের আত্বহত্যার নেপথ্যে রফিক দালাল এর বিচার চাই এলাকাবাসী।
নয়নের ভাই আলমঙ্গীর
এলাকাবাসী জানান, দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর স্কুল পাড়া ও হিসনা কান্দির পাড়া গ্রামের রফিক দালাল পুলিশের দায়ের করা ৫২ মামলার সাক্ষী সে। বিশাল বাড়ী ও গাড়ীর মালিক, কি তার পরিচয় ? টাকা কামায়ের উৎস কি ? কান্দির পাড়া গ্রামের মৃত জসিম উদ্দীনের ছেলে নামমাত্র মুদিও ব্যবসায়ী রফিক, সে এলাকায় রফিক দালাল নামে পরিচিত, সে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে, পুলিশ তাকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে, পুলিশ মাদক ধরা ও তার মাধ্যমে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা তার প্রথম কাজ।
এলাকার মথুরাপুর, প্রাগপুর, রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন ও তেকালা পুলিশ ক্যাম্প তার নিয়ন্ত্রণে চলে। মথুরাপুর বিট পুলিশ তার ডানহাত, টাকা কামায়ের উৎস।
এ ছাড়া এলাকায় মাদক উদ্ধার ও যে কোন পুলিশের দায়ের করা মামলা হলে, সে ঐ মামলার সাক্ষী হয়। অর্থাৎ পুলিশ যেখানে রফিক সেখানে। বর্তমানে তার চলমান মামলার সাক্ষীর সংখ্যা ৫২টির উপরে।
সাক্ষী সমন পেলেই তার পোয়াবারো, প্রতিটি সাক্ষীর জন্য সে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আসামীদের কাছে হাতিয়ে নিয়ে, আদালতে মিথ্যা সাক্ষীদেয়। সে একজন পেশদার সাক্ষী।
এলাকাবাসী আরো জানান, পুলিশ এর সোর্স এইটা কে পুঁজি করে, মানুষকে মামলার ভয় দেখায়ে ব¬াক মেইল করে টাকা হাতিয়ে নেয়, সে মাদক জগতের পুলিশ স্বীকৃত গডফাদার, প্রতিটি ঘরে মাদক পৌঁছে দিতে সে মাঠে নেমেছে।
আসামীদের কাছে টাকা নিয়ে চার্জশীটে ফাইনাল করা কাজে সে দক্ষ নায়ক,এলাকার মেম্বর জানান রফিক পুলিশের দালাল, কোন ব্যাক্তি থানায় অভিযোগ করলে, সে বাদী-বিবাদীর কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে পুলিশকে দিয়ে সে ভাগাভাগী করে নেয়, মথুরাপুর দরগাপাড়া গ্রামে সানোয়ার হোসেন নামে একজন, এক মহিলার ঘরে গলায় রশি দিয়ে আত্বহত্যা করলে, এ মামলায় প্রায় ১৫/২০ জনের কাছে মামলার ভয় দেখিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা জোর পূর্বক আদায় করে।
রফিক দালাল তারই ধারাবাহিকতায় নয়ন (২৩) কে একটি পাখি ভ্যান চুরির অপবাদে স্থানীয় থানা পুলিশের সোর্স খ্যাত রফিক, জুবায়ের ও রাসেলের নেতৃত্বে নয়নকে রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ১০ থেকে ১২ জন মিলে বেধড়ক মারধর করে। রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে, একপর্যায়ে নয়ন অসুস্থ হয়ে পড়লে, স্থানীয় থানার দালাল খ্যাত রফিক নয়নের বাড়িতে ফোন দিয়ে তাকে নিয়ে যেতে বলে।
পরে নয়নের অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন দৌলতপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন ও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখেন। পরে নয়নের অবস্থা উন্নতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। নয়ন পেশায় একজন ভ্যান চালক ছিলেন এবং ভ্যান চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে থালা বাসন মাজার কাজ করতেন। সংসার জীবনে তার ছয় মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নয়নের বাবা পচু মন্ডল বলেন, আমার ছেলে কোন অবস্থাতেই কোন প্রকার চুরির সাথে জড়িত থাকতে পারে না। ইতিপূর্বে এধরনের কোনো অভিযোগও আমাদের কাছে আসেনি, কিন্তু ১৫/১৬ দিন আগে রাত ১১টার দিকে আমার ছেলেকে রফিক দালাল, সামিউল , রাসেল, সালাম, লিটন, সহ সব মিলিয়ে ১০/১২ জন লোক বাড়িতে এসে আমার ছেলে নয়ন কে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তারা নয়নকে চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আমার কাছ থেকে ৮হাজার টাকা দাবি করে।
আমি অনেকটা বাধ্য হয়েই অবশেষে ৬ হাজার টাকা দিতে স্বীকৃতি জ্ঞাপন করি এবং টাকা পরিশোধ করি। তার কিছু দিন পরে তারা আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে আমার ছেলে নয়নকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলে ১৩ তারিখ রাত আনুমানিক ১১ থেকে সকাল ৬ টার মধ্যে যে কোন সময় মনের দুঃখে ক্ষোভে পড়ে চুরির অপবাদ সইতে না পেরে চেতনানাশক ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে।
এদিকে এলাকাবাসী এবং নয়নের ভাই আলমঙ্গীর জানান, রফিক দালালসহ এলাকার সংঘবদ্ধ একটি চক্র বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষ জনকে হয়রানি মূলক অপবাদ দিয়ে বিচার সালিশের নামে অর্থ আদায় করে থাকে। যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায় এলাকায় বসবাসরত শান্তিপ্রিয় জনগণ। এলাকাবাসী উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কর্ষণ করে, ন্যায় বিচার দাবী করেছে।