দৌলতপুর প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ ৮ ডিসেম্বর, দৌলতপুর ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়, দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৯৭১ সালে আদাবাড়িয়ার ব্যাঙগাড়ীর মাঠ, পিয়ারপুর ইউপি’র শেরপুর, চিলমারী ইউপি’র বাজুমারা, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর ইউপি’র মহিষকুন্ডি, খলিশাকুন্ডি, হোগলবাড়িয়া ইউপি’র তারাগুনিয়া ও চামনায়, বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এই দিনে পাকিস্তানী হানাদাররা মুক্তি যোদ্ধাদের কাছে আত্বসর্মপণ করে। দৌলতপুর হানাদার মুক্ত হয় এবং থানা চত্বরে বিজয় পতাকা উড়ায়নের মধ্যদিয়ে মুক্তিকামী বীর সূর্য সন্তানেরা দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত করেন।
দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত করতে পাকসেনাদের সাথে মুক্তি যোদ্ধাদের মোট ১৬টি সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। তৎকালিন দৌলতপুর থানায় পাক হানাদারদের সাথে সব চেয়ে বড় যুদ্ধ হয় ১৯ নভেম্বর, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ব্যাঙ গাড়ী মাঠে, সেখানে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২ জন মিত্র বাহিনীর সদস্য শহিদ হন। এ যুদ্ধে ৩ শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ শে নভেম্বর কুষ্টিয়ার সর্ববৃহৎ গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বর্তমান দৌলতপুর থানার শেরপুর মাঠ নামক স্থানে। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন কমান্ডার মিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট সরকারি ইউনিট কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান।
২৫ নভেম্বর পাক সেনারা শেরপুর মাঠে অবস্থান করে এবং মধ্যরাতে শেরপুরের নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরে আগুন ধরিয়ে, বেপরোয়া ভাবে গুলি বর্ষণ শুরু করে পাক হানাদার বাহিনী, মুক্তিবাহিনী পাক হানাদারদের উপস্থিতি ও অবস্থান জানতে পেরে বর্তমান মিরপুর থানার চিথলিয়া এবং দৌলতপুর থানার শেরপুরের মধ্যবর্তী স্থানে সাগর খালি নদীর তীরে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। রাত আনুমানিক তিন টার দিকে পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সাথে মোকাবেলা করার জন্য ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকে। ২৬ নভেম্বর ভোর পাঁচটার সময় উভয়পক্ষ পরস্পরের মুখোমুখি হয়, প্রায় ছয় ঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর পাকহানা দার বাহিনী পিছু ঘটতে বাধ্য হয় এবং ৬০ জন পাক সেনা নিহত হয়।
অন্যদিকে শেরপুর গ্রামের হাজী মেহের আলী ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। একই গ্রামে হীরা ও আজিজুল নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধার গুরুতর আহত হন, এছাড়াও ওই যুদ্ধে কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান, মইনুদ্দিন, কুষ্টিয়া জেলার আব্দুল জব্বার, হায়দার আলী সহ ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। কুষ্টিয়া জেলায় সংঘটিত সর্ববৃহৎ এই গেরিলা যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর পরাজয় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে মিরপুর থানার একটা বিরাট এলাকা মুক্তি বাহিনীর অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয়। মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প পাহাড়পুর গ্রামে স্থাপন করা সম্ভব হয়, যার ফলে ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বররের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এভাবে কুষ্টিয়া জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সূচিত হয়। মুক্তি যোদ্ধাদের তোপের মুখে পাকসেনা ও রাজাকাররা দৌলতপুর থানার অভ্যন্তরে আশ্রয় গ্রহণ করে।
অন্য একটি তথ্যে পাওয়া যায় ২৯ নভেম্বর পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর মাঠে পাক হানাদারদের সাথে আরো একটি বড় যুদ্ধ হয়। মরহুম মেহের আলির পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব ও আমদহ গ্রামের সলেমান ফরাজীর পুত্র ওয়ারেশ আলি শহিদ হন। এ যুদ্ধে শতাধিক পাক সেনা ও দুই শতাধিক আলবদর-রাজাকার নিহত হয়।
ভাগজোত মোড় এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ শহিদ হন, তারাগুনিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন শহিদ হন, খলিশাকুন্ডি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক শহিদ হন, এসব খন্ড যুদ্ধে শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়।
কয়েক দিনের মধ্যে মুক্তি যোদ্ধাদের তোপের মুখে পাকসেনা ও রাজাকাররা দৌলতপুর থানার অভ্যন্তরে আশ্রয় গ্রহণ করে। ৭ ডিসেম্বর পাকসেনারা রাতের আঁধারে পালিয়ে গিয়ে কুষ্টিয়া শহরতলীর জগতী বটতলী এলাকায় আশ্রয় গ্রহণ করে। দৌলতপুর থেকে পাকসেনারা পালানোর সময় রাত ৯টার দিকে মুক্তিবাহিনী চামনা-আল্লারদর্গা এলাকার বর্তমান বিএটিসি’র কাছে প্রতিরোধ গড়ে তুললে রাজাকার-পাকসেনার সম্মুখ যুদ্ধে ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর গ্রামের মরহুম সামসুজ্জামান খাঁনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক খান নিহত হন ও কয়েকজন এলাকাবাসী আহত হন।
এলাকাবাসী তার লাশ তারাগুনিয়া বর্তমান রফিক নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে রাস্তার ধারে দাফন করেন। তাঁর নাম অনুসারে এলাকার নাম ও স্কুলের নাম “রফিক নগর” নাম করণ করা হয়েছে এবং একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছর এলাকাবাসী ৮ ডিসেম্বর দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।
সম্পাদক : খন্দকার জালাল উদ্দিন
সম্পাদকীয় কার্যালয়: খন্দকার সুপার মার্কেট , (২য় তালা ) আল্লারদর্গা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া ।
মোবাইল : ০১৭১৮-১৬৪২৬৬, ই-মেইল: uddinjalal030@gmail.com
ই-পেপার কপি