খন্দকার জালাল উদ্দীন : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে তোলপাড় চলছে উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে। গত সোমবার (১০ জুলাই) কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা স্বাক্ষরিত দৌলতপুর উপজেলা শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলনের আগের দিন হঠাৎ কমিটি ঘোষণা করা এবং কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় এই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। পদ প্রত্যাশী অনেকেই এই কমিটিকে পকেট কমিটি হিসাবে অভিহিত করেছেন এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে রকিবুল করিম রিংকুকে। গঠিত কমিটির এক সহ-সভাপতি, এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও এক সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। সহ-সভাপতি মনোয়ার কবির মিন্টুও নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন। এছাড়াও এক সাংগঠনিক সম্পাদক আগে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন বলে কথিত আছে।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তাশফিন আব্দুল্লাাহ বলেন, দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতার সুপারিশকৃত নাম গুলো দিয়ে এই কমিটি হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের সুপারিশকৃত ছাত্রলীগের ত্যাগী সাবেক নেতাদের নাম বাদ দিয়ে এই পকেট কমিটি করা হয়েছে। জেলা সম্মেলনের একদিন আগে কমিটি দেওয়াও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তিনি দাবী করেছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আনিচুর রহমান সাগর বলেন, আমি দীর্ঘ ৮-৯ বছর যাবৎ দৌলতপুর স্বেচ্ছাসেবক লীগকে সংগঠিত করে যাচ্ছি। ১৪ ইউনিয়নের ১২৬ ওয়ার্ডে আমি তিলে তিলে এই সংগঠন সৃষ্টি করেছি। আর বর্তমান সংসদ সদস্য সরওযার জাহান বাদশাহ নিজের বলয় সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সাথে গোপনে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই পকেট কমিটি করেছে। তিনি আরো বলেন, সম্মেলনের আগের দিন হঠাৎ কমিটি ঘোষণা এবং কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের এই কমিটি আমি মেনে নিতে পারছি না। তাই আমি এই পকেট কমিটির বিলুপ্ত চাচ্ছি।
এদিকে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরিফ উদ্দিন রিমনের কাছে এই কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমেই তিনি বলেন ডালমে কুচ কালা হে কারণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের একদিন আগে সম্মেলন ব্যতীত তড়িঘড়ি করে গঠনতন্ত্র বহির্ভূতভাবে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে। যারা এই কমিটির নেতৃত্বে এসেছেন তারা ম্যাক্সিমামই বিতর্কিত। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আমাকে এই কমিটির বিষয়ে কেউ কোনো রকম অবগত করে নাই। যেহেতু এই কমিটি থেকে একসময় ছাত্রলীগ করে আসা ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছে তাই এই কমিটি যাতে স্থগিত করা হয় তার জোর দাবি জানাচ্ছি।
দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমন বলেন নবগঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় ছাত্র সমাজের দৌলতপুর কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি ও উপজেলা ছাত্র সমাজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলমকে। জহুরুল আলমের ভাই জাহিদুল ইসলাম দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাংসদ প্রয়াত আফাজ উদ্দিন আহমেদের বাড়িতে বোমা হামলার মামলায় যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন। এছাড়াও এই জাহিদুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর খুনির দল ফ্রিডম পার্টির মনোনয়ন নিয়ে দৌলতপুরে নির্বাচন করেছিলেন।
তাছাড়াও এই জহুরুল আলম আওয়ামীলীগে যোগদান করার পরে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। অতএব আমরা এই কমিটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি সেই সাথে অবিলম্বে কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হোক বলে মন্তব্য করেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।