দৌলতপুর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ২৬টি অবৈধ ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে দেখার কেউ নেই
খন্দকার জালাল উদ্দিন:কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ২৬টি অবৈধ ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরকারী বিধি অনুযায়ী এসকল ইটভাটার নেই কোন সরকারী অনুমোদন। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই তিন ফসলী কৃষি জমিতে গড়ে তোলা ২৬টি ইটভাটা কিভাবে চলছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মনে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা।
তাছাড়া এসকল ইঁভাটায় জ্বালানী হিসাবে কয়লার বদলে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে এসকল ইটভাটার মাটি ও ইট পরিবহনে কয়েক শতাধিক শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দৌলতপুরের সড়কগুলোতে চলাচল করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে কেউ প্রাণ হারাচ্ছে কেউ হচ্ছেন পঙ্গু।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে আল সালেহ মামুন, হজমুদ্দিনের ছেলে ইদবার আলী, মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে আনারুল ইসলাম, অবৈধভাবে সাদিপুর গ্রামেই তিন ফসলি জমিতে জনবসতি এলাকায় চারটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। পার্শ্ববর্তী স্বরুপপুর গ্রামে মৃত শাসুদ্দিনের ছেলে আব্দুস সাত্তার ও বজলুর রহমান এবং ইয়াকুব হালসানার ছেলে নুরুল ইসলাম তিনটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন।
ফলে এই দুই গ্রামের রাস্তাঘাট ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে দৌলতপুর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় সম্পুর্ণ আবাদি জমিতে জহুরুল, ইয়াছিন আলী ও আব্দুল্লাহ, খান পাড়ায় জল্লাদ খান চারটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। দৌলতপুর কলেজ ও দাখিল মাদ্রাসার পাশে আব্দুল হান্নান ও চক দৌলতপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনে রমজান আলী,
দৌলতপুর থানার পুর্বপাশে অর্পিত সম্পত্তিতে নজরুল ইসলাম, রিফাইতপুর জোয়াদ্দার পাড়া গ্রামে শহিদুল ইসলাম ওলি, পাশ্ববর্তী গলাকাটি মোড়ে ঝুমুর আলী, আব্দুস সালাম ও নজরুল ইসলাম, বড়গাদিয়ায় হাবলু মোল্লা, খলিশাকুন্ডিতে কামাল হোসেন, জয়রামপুরে কান্টু মোল্লা, ডাংমড়কায় কুষ্টিয়া প্রাগপুর সড়কের সাথে সমেদ আলী, ফজলুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেছেন।
সাদিপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদি জমির চারিপাশে ইটভাটা গড়ে তোলায় সেখানে আর কোন ফসলের আবাদ করতে পারছেন না। উপজেলার ২৬ টি ইটভাটা ব্যবসায়ী দিনে ও রাতের আধারে ড্রাম ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন। সড়কগুলোতে এসব অবৈধ যানবাহনের বে-পরোয়া চলাচলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, এ সকল ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে একদিকে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে অন্যদিকে জনবসতি এলাকায় অসংখ্য ইটভাটার ফলে, সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্ট সহ নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দৌলতপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান,
দীর্ঘদিন ইটভাটার ধোয়ায় বাতাসে কার্বণ বৃদ্ধি পায়। এবং তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, ইটভাটাগুলোর লাইসেন্স না থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এ ব্যাপারে জানার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক এর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জানাযায়, উপ-পরিচালক প্রশিক্ষনের জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সিনিয়র কেমিষ্ট হাবিবুল বাশার জানান, কোন ইটভাটা মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়নি। খুব শীঘ্রই এসকল অবৈধ ইটভাটা গুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ওবায়দুল্লাহ জানান, ইটভাটায় কৃষি জমির মাটি ব্যবহার এবং কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আলালত পরিচালনা চলমান আছে। দু-এক দিনের মধ্যে তা আরো জোরদার করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সম্পাদক : খন্দকার জালাল উদ্দিন
সম্পাদকীয় কার্যালয়: খন্দকার সুপার মার্কেট , (২য় তালা ) আল্লারদর্গা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া ।
মোবাইল : ০১৭১৮-১৬৪২৬৬, ই-মেইল: uddinjalal030@gmail.com
ই-পেপার কপি