খন্দকার জালাল উদ্দিন:কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা সামলাতে নিজের লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন ওই ব্যবসায়ী। এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে হামলাকারীদের সিসি টিভি ফুটেজ। থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। ঘটনা ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ১১ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকালে দৌলতপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তারাগুনিয়া বাজারে এসব ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, তারাগুনিয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী হুমায়ুন কবির জনির মোটরসাইকেল শো-রুমে এবং শো-রুম সংলগ্ন বসত বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বেশকিছু সন্ত্রাসী। পার্শ্ববর্তী গ্রামের আফে মন্ডলের ছেলে মামলত, বরকত ও রেফে মন্ডলের ছেলে আশরাফুলের নেতৃত্বে লাঠিসোটা ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শো-রুম এবং বাড়িতে হামলা চালায়, হামলাকারীর সংখ্যা অন্তত ২০ জন।
এসময় তারাগুনিয়া বাজার এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন ব্যবসায়ী জনি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। গুলির জবাব স্বরূপ থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং হামলার ঘটনায় একটি অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির জনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাঁচামাল ব্যবসায়ী জালাল বলেন, হঠাৎ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে অনেক মানুষ একসাথে এসে হোন্ডা শো রুমে এবং শো রুম মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমি ঘটনাস্থল থেকে শো রুমের মালিক হুমায়ুন কবির জনিকে সরিয়ে নিই, তবুও হামলাকারীরা পিছু ছাড়েনি। পরে পুলিশ ডাকা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
তারাগুনিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সোহান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাহাবুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় বাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছে, ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ক্যামেরায় দেখা যায় লাঠি হাতে শো-রুমের কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে মামলত এবং আশরাফুল। শো-রুম ভাঙার চেষ্টাও করছে তারা। দল বেঁধে হামলা চালানো হচ্ছে ভুক্তভোগীর বসতবাড়িতে। হামলায় অন্তত চারজন আহত হয়েছে।
বাজারটি’র অন্যতম ব্যবসায়ী এবং মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার কবির মিন্টু বলেন, খুবই নিন্দনীয় এ হামলা। রাজনীতিকে পুঁজি করে কেউ বাজারে অনৈতিক প্রভাববিস্তারের চেষ্টা করবে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাবে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এমন ঘটনা ঘটতে দেয়া যাবে না। ঘটনাটির আইনী বিচার হওয়া প্রয়োজন।
দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, হাটের শিডিউল জমা সংক্রান্ত বিষয়ে এই ঘটনা। হুমায়ুন কবির জনি হাটের ইজারা পেতে শিডিউল জমা দিয়েছে সেই ক্ষোভ থেকে এই ঘটনা হতে পারে। তেমন বড় কিছু ঘটেনি বলেও দাবি করেন ওসি রফিকুল ইসলাম। প্রধান অভিযুক্ত মামলত হামলার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, বন্দুকের সামনে তো টিকা যায় না। ওরা ফায়ার দিলে আমরা চলে আসি।
তথ্য পাওয়া গেছে, পান ও অন্যান্য কাঁচামালের ঐতিহ্যবাহী বড় বাজার তারাগুনিয়ায় ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির জনি কর্মসংস্থান সমন্বয় করেছেন তিন হাজারের মতো মানুষের। বাজারে ৭০টিরও বেশি দোকানঘর ভাড়া, নিজস্ব মোটরসাইকেল শো-রুম, পানের আড়ৎ, বাণিজ্যিক ব্যাংকে ফ্লোর ভাড়াসহ বিভিন্ন ব্যবসা আছে তার। তারাগুনিয়ায় বর্তমানে বাজার পরিচালনা কমিটি না থাকলেও জনি’র প্রয়াত বাবা লুৎফর রহমান একসময় সভাপতি ছিলেন তারাগুনিয়া বাজার কমিটির। দ্রুত ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।