খন্দকার জালাল উদ্দীন : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ভেড়ামারা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হালিমা বেগম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের নানাবিধ আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী বৃন্দ।
আল্লারদর্গা প্রেস ক্লাবে ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১০ টায় এসে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম সহ ১২জন শিক্ষক লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ২৮/০২/২০২৪ ইং তারিখ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর এ শিক্ষক কর্মচারীর পক্ষ হইতে সহকারী প্রধান শিক্ষক অসিত কুমার পাল আবেদন করেন।
যাহার আইডি নং- ২৫১৬৫। যশোর বোর্ড প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য গত ০৪/০৩/২০২৪ ইং তারিখ যার স্বারক নং বিঅ-৬/৩৭.১১.৪০৪১.৫০১.০১.৬.২০.১৬৫১৭ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া কে চিঠি প্রেরণ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২৭/০৩/২০২৪ ইং তারিখ যার স্বারক নং- ৩৭.১০.৫০১৫,০০০.৯৯.১৪২.২৪ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত করিবার জন্য ০৩ (তিন) সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি দ্বারা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন এবং গত ২৪/০৪/২০২৪ ইং তারিখ তদন্ত প্রতিবেদন যশোর বোর্ডে প্রেরণ করেন।
যশোর বোর্ড উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করিয়া তাহার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৭/০৮/২০২৪ ইং তারিখ যার স্বারক নং বিঅ- ৬/৫৪৯৪/৩৭.১১.৪০৪১.৫০১.০১.৬.২০.১৬৫১৭ সভাপতি/উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।
সভাপতি/ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশক্রমে গত ০৩/০৯/২০২৪ ইং তারিখ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অসিত কুমার পাল বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভা আহবান করেন। আলোচনা সভার আলোচ্যসূচী ছিল (০১) বোর্ড কর্তৃক প্রেরিত ২৭/০৮/২০২৪ ইং তারিখে চিঠির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ (০২) বিবিধ।
বিদ্যালয়ের সভাপতি/ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে গত ০৩/০৯/২০২৪ ইং তারিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস কক্ষে বৈকাল ৩.৩০ ঘটিকায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের লইয়া আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান শিক্ষককে শোকজ করিবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অতীব দুঃখের বিষয় গত ০৩/০৯/২০২৪ ইং তারিখ আলোচনা সভার পরও গত ১৭/০৯/২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত রেজুলেশন বহি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ সভাপতি/ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে থাকার পরও তিনি ১৮/০৯/২০২৪ ইং তারিখ ভেড়ামারা হইতে মেহেরপুর বদলী হইয়া যাওয়া পর্যন্ত অজ্ঞাত কোনো কারনে কাগজেই স্বাক্ষর করেননি। প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম এর আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়া ও বোর্ড হইতে তাহার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হইলেও এবং পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাহাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরও কেন তাহার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইল না তাহা আমাদের বোধগম্য নহে।
এখানে উল্লেখ্য প্রধান শিক্ষক গত ০৬/০৮/২০২৪ ইং তারিখ হইতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। অথচ প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার পরও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাহার এমপিও মাসিক বেতন চালু রাখার নির্দেশ প্রদান করেন এবং তাদের নির্দেশক্রমে গত আগষ্ট/২০২৪ ইং মাস থেকে নভেম্বর/২০২৪ ইং মাস পর্যন্ত ০৪ (চার) মাস প্রধান শিক্ষকের এমপিও বেতন প্রদান করা হয়।
মোঃ সিরাজুল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে কোন কোন খাতে অর্থ আত্বসাত করেন, তা এ ভাবে জানান, প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম-এর বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহঃ ১। উপবৃত্তির টিউশনীর ফির অর্থ ক্যাশবুকে উঠানো হয়নি। ২। উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্রদের নিকট থেকে মাসিক বেতন নেওয়া হয়। ৩। ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিঃ ফি বাবদ ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে আদায়কৃত অর্থ ক্যাশবুকে উঠানো হয়নি।
৪। ছাড়পত্র বাবদ ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে আদায়কৃত অর্থ ক্যাশবুকে উঠানো হয়নি। ৫। ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির জন্য জরিমানা বাবদ আদায়কৃত অর্থ ক্যাশবুকে উঠানো হয়নি। ৬। ২০২৪ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি ফি/পুনঃ ভর্তি ফি একই রশিদে বামপাশে ৯০০/= টাকা ও ডান পাশে ১০০০/= টাকা কেটে অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রদান করা হয়েছে। ৭। এস,এস,সি পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়।
৮। এস,এস,সি পাশ ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে প্রশংসা পত্র ও সার্টিফিকেট বাবদ আদায়কৃত অর্থ ক্যাশবুকে উঠানো হয়নি। ৯। বিদ্যালয়ের পরীক্ষার খাতা ও পুরাতন কাগজ বিক্রয়ের অর্থ ক্যাশবুকে উঠানো হয়নি। ১০। করোনা কালিন সময়ে এস, এস, সি পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত টাকা বোর্ড কর্তৃক ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। ১১। এফ, ডি, আর- এর লভ্যাংশ টাকা ক্যাশবুকে উঠানো হয়নি।
১২। প্রতিদিনের আয় ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে খরচ করা হয়নি। ১৩। একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে ভোকেশনাল শাখা থেকেও তিনি মাসিক বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করেন। ১৪। দূর্ণীতি করে ভেড়ামারা শহরে বিলাশ বহুল বাড়ি, জমা- জমি ক্রয়সহ বিভিন্ন ধরনের সম্পদ গড়েছেন। ১৫। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শিক্ষক- কর্মচারীদের সাথে বিগত পনের বছর অমানবিক আচরণ করেছেন। মোঃ সিরাজুল ইসলাম ১৬। বিগত পনের বছরে প্রায় কোটি টাকার উপরে বিদ্যালয় থেকে আত্মসাৎ করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় এক রাজনৈতিক নেতার সংগে হাত মিলায়ে তার প্রভাবে কোটি টাকা আত্বসাত ও ভেড়ামারা কাচারীপাড়ায় মহিলা কলেজের সামনে বিশাল বহুতল অট্টালিক নির্মান করেছে। প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের মাদিয়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষন করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক বৃন্দ। এসময় আল্লারদর্গা প্রেস ক্লাবের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।