1. raselahamed29@gmail.com : admin :
  2. uddinjalal030@gmail.com : jalal030 :
শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দৌলতপুর থেকে মেহেরপুরের অপহৃত শিশু উদ্ধার ॥ পরিবারের কাছে হস্তান্তর দৌলতপুরের সাংবাদিক শাহীনের কন্যা ওয়াফা ইসলাম জিপিএ-৫ লাভ করেছে দৌলতপুরে চেয়ারম্যান নঈমউদ্দিন হত্যার প্রধান আসামি তরিকুল কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব দৌলতপুরে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন বি এন পির আয়োজনে জনসভা অনুষ্ঠিত দৌলতপুরে মধ্যরাতে দৌলতখালী গ্রামে গুলির শব্দে এলাকাবাসী আতঙ্কিত দৌলতপুর র‍্যাবের অভিযানে গাজা সহ ১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার দৌলতপুরের৷ পদ্মা নদীতে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার দৌলতপুরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত দৌলতপুর আল্লারদর্গা বাজারের ১.৫ কি:মি: রাস্তা সংস্কার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নির্বাচিত বাজার কমিটির দাবিতে মানববন্ধন দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপি’র দুই সহযোগীসহ তিনজন আটক

আজ কাজী নজরুল ইসলাম এর ৪৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী

Khandaker Jalal Uddin. Email: uddinjalal030@gmail.com
  • Update Time : শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩
  • ৩২১ Time View

আজ কাজী নজরুল ইসলাম এর ৪৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী
ও ১৯৪২-১৯৭৬ এর দিন গুলি
খন্দকার জালাল উদ্দীন

বাংলাদেশের জাতীয় কবি.সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে ২৪ মে, বাংলা ১৩০৬ সালে ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেণ। তার ডাক নাম দুঃখু মিয়া, পিতার নাম কাজী ফকির আহাম্মেদ, মাতার নাম জাহেদা খাতুন। বাংলা ১৩৮৩ সনের ১২ ভাদ্র মোতাবেক ১৯৭৬ সালের ২৯ আগষ্ট পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আমাদের কাঁদিয়ে অজানার দেশে চলে যান। তাঁর ৪৭ তম মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় শিক্ত বাংলাদেশ।

১৯৪২ সালের ১০ জুলাই কবি কাজী নজরুল ইসলাম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন, সেদিন তিনি একটি চিঠি লিখে ছিলেন, তার সব সময়ের ছায়া সংগী জুলফিকার হায়দারের কাছে। চিঠিতে তিনি লিখেন-

”প্রিয় হায়দার,                                                    তারিখ :৭.১০.৪২
তুমি এখনি চলে এসো অমলিন্দুকে আজ পুলিশ এ্যরেষ্ট করেছে, আমি কাল থেকে অসুস্থ।
ইতি-নজরুল
নজরুল চিঠিতে যে তারিখ উল্লেখ করেন সেটা হল-৭.১০.৪২, কিন্তু প্রকৃত তারিখ ছিল-১০.০৭.৪২, কিন্তু তখন নবযুগ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক অমলিন্দু এ্যরেষ্ট হননি। সে দিনই তিনি বাক রুদ্ধ হয়ে পড়েন, আরো অনেক আগে থেকেই কবির মধ্যে অনেক অসংগতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল, রোগের অনেক আগে থেকেই সবার অলোক্ষ্যে শুরু হয়েছিল তার অসুস্থতার আলামত।
হায়দার সেদিন একটু দেরী না করে কবির ১৫/৪ শ্যাম বাজার ষ্টিটের দেতালা বাসভবনে উপস্থিত হয়েছিলেন, কবির পাশেই বিছানায় নিথর হয়ে পড়ে আছেন, ৮ বছর আগে পক্ষাঘাত হয়ে অসুস্থ প্রমিলাদেবীও, কবি অসুস্থ তার ডান হাত খানা কাঁপছে।

কিছুক্ষণ পর ডুকলেন বাড়ির মালিক হোমিও ডাক্তার ডি.এল.সরকার, সরকার বললেন কি ব্যাপার শরীরটা কি ভালো নেই ? কবি হাতের অসাড়তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন ”হাতটা কাঁপছে। এই ছোট্ট কথাটি স্পষ্ট করে বলতে পারলেন না। ডাক্তার বললেন এটাকি প্রথম এটাক ? এর আগে এমন হয়েছে ? গিরিবালাদেবী বললেন নুরুর কোন অসুখই কোন দিন দেখিনি। আজ দেখুন কথা বলতে পারছে না।

কবির অসুস্থতার কথা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল,আশা করা হয়েছিল যে ভারত বিখ্যাত এই কবি, বাঙালির প্রাণের কবি, কাজী নজরুল ইসলামের এই দূর্দিনে তার ভক্তরা সবাই দলে দলে ছুটে আসবেন।

অসম্ভব জনপ্রিয় সব নজরুল সংগীত, ইসলামী সংগীত, শ্যামা সংগীত, বাঙ্গালীদের জাগরণের সংগীত লিখে সুর দিয়ে যিনি বাঙ্গালীর সংগীত জগতকে সংস্কৃতির জগতকে সমৃদ্ধ করেছিলেন, অসুস্থ অবস্থায় কাউকে পাশে পেলেন না তিনি।

শাশুড়ি গিরিবাল দেবী,অসুস্থ স্ত্রী প্রমীলা, সন্তান, সেই সাথে সংসার চালানোর জন্য টাকা দরকার, সর্বোপরি তার নিজের চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্র কেনার জন্য টাকা দরকার। ১৯ জুলাই ১৯৪২ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হক সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কবি নজরররুল ইসলামের অবস্থা জানানো হলো, কিন্তু শুনলে বিস্মিত হতে হয় যে, হক সাহেব নিজেকে পাশ কাটিয়ে তৎকালিন অর্থমন্ত্রি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, তার উপর দায়িত্ব অর্পণ করে কোন রকমে নিজের দায়িত্বটুকু এড়ালেন।

তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কিন্তু অসুস্থ কবিকে স্বয়ং দেখতে আসেন এবং কবির ইচ্ছে অনুসারে হাওয়া বদলের জন্য মধুপুর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। ইতিমধ্যে সংবাদপত্রে কবির অসুস্থতার খবর আরো একবার ছাপা হল কিন্তু কেউই তাকে দেখতে আসলেন না। কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য পাওয়া গেল না।

হোমিও বাদ দিয়ে এ্যলোপ্যথিক চিকিৎসা করা হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো,কিন্তু তার জন্য তো টাকা দরকার টাকার সংস্থান কে করবে, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে যা অর্জন হল তা খুব দুঃখ জনক ও মর্মান্তিক। আবার নির্লজ্জের মত ফজলুল হক সাহেবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হলো, পাওয়া গেল নিষ্ফল উপদেশ। জনাব নাজিম উদ্দীন শুনে বললেন অসুখ হয়েছে ডাক্তার দেখান ? হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দ্দি বললেন নবযুগের সম্পাদক কাজী নজরুল ইসলামের অসুখ কিংবা আর্থিক দুরবস্থা সেজন্য আমার কাছে কেন ? তোমাদের জন্য ফজলুল হক আছেন, তার কাছে যাও ?

জনাব শফিকুল ইসলাম তখন ছাত্র, সব কথা শুনে যে দৃষ্টি-ভঙ্গিতে সে সময় বিচার করেছিলেন তা খুব লজ্জাজনক ও কষ্টের। আজ বর্তমান প্রজন্মকে জেনে রাখা ভাল, এই কারণে যে, ভবিষ্যতে যেন কোন প্রতিভার প্রতি অবিচার করা না হয়। কবির চিকিৎসার জন্য নিরুপায় হয়ে তৃতীয় বারের জন্য জনাব ফজলুল হক সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো, সব শুনে তিনি বললেন নজরুলকে রাঁচির মেন্টাল হসপিটালে পাঠিয়ে দাও, কবির পরিবার বিষয়টি ভালভাবে নিতে পারেনি।

সে সময়ের স্বনামধন্য কবিরাজ বিমলান্দ তর্কতীর্থ স্বপ্রণদিত হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসার দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তার চিকিৎসায় কিছু সুস্থ ছিলেন এবং পরিবর্তন আসলেও পরে অসুখ বেড়ে যায়।

১৯৪২ সালে ২৫ অক্টোবর কবিকে লুম্বিনী মানসিক হাসপাতালে বিশিষ্ট ডক্টর গিরীচন্দ্রশেখর বসুর অধিনে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। সেখানে বেঁধে রাখা হয়েছিল তার ডান পা, পায়ে পরানো হয়েছিল শিকল। সে শিকল ভাঙার জন্য অস্থিব হয়ে যায় কবি। রাত-দিন ধরে চলাতেন অস্থিরতা, যত্রতত্র মলমুত্র ছড়াছড়ি করতেন, বাঘের মতো গর্জন, লাল টুকটুকে ছিল তার বড় দু’টি চোখ। তার সেই অসহায় চিৎকার,কেহ মেনে নিতে পারেনি। হাসপাতালের ব্যায় বহন করতে না পেরে অবশেষে ১৯৪৩ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারী হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো কবিকে, তিনি বাড়িতে এসে হয়ে পড়েছিলেন প্রায় সম্পূর্ণ নির্বাক নিঃক্রিয়।

তার চোখ দু’টিতে ছিল উদাসহীন এক দৃষ্টি। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তিনি যখন স্মৃতিভ্রষ্টের অন্ধকারে ক্রমশ ডুবে যাচ্ছেন, সে সময় কিন্তু বাইরের পৃথিবীতে চলছিল ঘটনার ঘনঘটা। মহত্বাগান্ধির নেতেৃত্বে ভারত ছাড় নন্দলোন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল আজাদ হিন্দ বাহিনীর মরণ পন লড়াই। এরই মাঝে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটা, ভারতে জাপানিদের বোমাবর্ষণের আতঙ্ক, পাশাপাশি তুষের আগুনের মতো ধিকি ধিকি জ্বলছিল সারা দেশ জুড়ে হিন্দু মুসলমানের ভয়ঙ্কর জাতীগত দাঙ্গা।

১৯৪৬ সালের আগষ্ট মাস, শেষ সম্বল টুকু বিক্রি করে, এ সময় নজরুল ইসলামের সংসারটিকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন, সমস্ত দুর্যোগ থেকে আগলে রেখেছিলেন, সেই নজরুল ইসলামের শ্বাশুড়ী গিরিবালাদেবী। তিনি সংসার চালাতে না পেরে, দুঃখ কষ্ট সইতে না পেরে এই মহিলা সবার অলক্ষ্যে চিরকালের জন্য নিখোঁজ হলেন। কবির সংসার ছেড়ে তিনি চলে গেলেন, কোথায় গেলেন কেউ তার খোঁজ আর কখনো পেলেন না। এ ভাবে কেটে গেল বেশ কয়েকটি বছর।

১৯৪৭ সাল ১৫ আগষ্ট দেশ স্বাধীন হল, নবগঠিত পশ্চিম বঙ্গ সরকার কবি নজরুল ইসলামের জন্য অর্থ সাহায্য বরাদ্দ করলো। ১৯৫২ সালের ২৫ জুলাই মূখ্যমন্ত্রী ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের পরামর্শে নজরুল ইসলামকে সরকারি ভাবে রাঁচিতে পাঠানো হলো।

রাঁচিতে, মেন্টাল হাসপাতালের অধ্যক্ষ মেজর ডেভিসের তত্বাবধানে প্রায় চার মাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরেও কবির অবস্থার কোন উন্নতি হলো না।
১৯৫৩ সালের ১৪ই মে সরকারি অর্থ সাহায্যে কবিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। সেখানে কোন ডাক্তারই কবির রোগ উপশমের কোন পন্থা নির্ণয় করতে পারলেন না। একটি মেডিকেল রিপোর্টে তারা বলেছেন “উই আর কনফিডেন্ট দ্যাট নো ফর্ম অফ মেডিকেল সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট ক্যান রিষ্টোর মি: ইসলাম ইন্টেলেকচুয়াল পাওয়ার”।

কবি কি রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তা নিয়ে কিন্তু ডাক্তারদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল, কোন কোন চিকিৎসক তারা বললেন, কবি “ইন ভলিউশনাল সাইকোসিস” রোগে আক্রান্ত, আবার কোন কোন চিকিৎসক রাঁচির ডাক্তার মেজর ডেভিসের ডায়গনিক সমর্থন করলেন।

ডিসেম্বরে কবির উপর সেরিব্রাল এনজিওগ্রাফি পরীক্ষা করা হয়, ৯ ডিসেম্বর কবিকে লন্ডন থেকে ভিয়েনায় নেওয়া হল। সেখানকার ডাক্তার বললেন, রোগটি এতই পুরাতন হয়েছে, কবির সেরে ওঠার আর কোন সম্ভাবনা নেই। ১৯৫৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর সোমবার কবিকে নিয়ে সবাই কলকাতায় ফিরে আসলেন।

১৯৬২ সালের ৩০ জুন কবি পত্নি প্রমিলাদেবী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৪ বছর, বর্ধমানের চুরুলিয়া তে কবি পত্নীকে সমাহিত করা হয়। প্রবীলা দেবীর মৃত্যুর পর কবি হলেন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ একাকী।

এরপর ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কবির জীবন কাটলো করুণায় বদান্যতায় রাষ্ট্রীয় অনুগ্রহের ভরসায়। একাধিকবার পরিবর্তিত বাসস্থান, আর দেশি চিকিৎসকদের ব্যর্থ চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে।

আপনার অনেকেই হয়তো জানেন যে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এই কুড়ি বছর ধরে কবিকে পাকিস্তানী করণ করার একটা চেষ্টা সব সময় সক্রিয় ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে নজরুলের পুনঃমূল্যায়ন,সত্যকার নজরুল অন্মেষণ নজরুলকে এক মহান সাংস্কৃতিক পুরধারূপে গ্রহণ করার এক প্রবণতা ছিল।

কবি আর দাঁড়িপাল্লার পণ্যবস্তু হয়ে রইলেন না। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকরা কবিকে সামনে থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রস্তাব দিলেন যে, ১৯৭২ এ কবির জন্মদিনটি তারা কবিকে সামনে রেখে বাংলাদেশেই উদ্যাপন করতে চান। পরের বছর কবিকে সামনে রেখে পশ্চিম বঙ্গে পালন করা হউক নজরুল জন্মজয়ন্তী।

১৯৭২ সালের ২৪শে মে বাংলাদেশের বিমানে কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসা হল, স্বাধীন মুক্ত বাংলাদেশের হাজার হাজার নাগরিকরা প্রাণোচ্ছাসে তাদের প্রিয় কবিকে বিমানবন্দরে তারা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো, যদিও নিরব নিঃক্রিয় নির্বিকার।

পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে কবি নজরুল ইসলামকে কলকাতায় ফিরিয়ে দিল না, তবে বাংলাদেশ বাসির ভালবাসা, মানুষের স্বতঃস্ফুত গভীর স্বাচ্ছন্দ বিধানে ও চিকিৎসায় ভারত সরকার এতটাই সন্তুষ্ট হয়েছিল যে, বাংলাদেশ সরকারের উপর কবিকে নিয়ে কোনো চাপ সৃষ্টি করা হলো না।

ঢাকা ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ীর কাছে একটি সরকারী বাসভবনে কবি কাজী নজরুল ইসলামের বোধশূন্য জীবন ধীরে ধীরে অতিবাহিত হচ্ছিল। ১৯৭৪ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি কলকাতায়। কবির ছোট ছেলে কাজী অনিরুদ্ধ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রেীয় সম্মান একুশে পদক প্রদান করেন এবং ডিলিট ডিগ্রীতে ভূষিত করেন।

এর পর কবির জীবনে নেমে আসে আবার অন্ধকার, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে ঘাতক বাহিনীর দ্বারা নৃশংসভাবে নিহত হন।
জারি হল জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন। তার সাথে সাথে কবির জীবনও আর নিরস্কুস-মসৃন রইল না, তাকে আগলে রাখার মানুষ আর থাকলো না। সেনা বাহিনীর এক পদস্থ কর্মকর্তার নজরে আসে কবির থাকার ছিমছাম বাড়ীটি, কবিকে চিকিৎসার নামে রাতারাতি এক প্রকার জোর করে তাকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়ীটি দখল করে নেয়।

বলা বাহুল্য শেখ মুজিবুর রহমান সরকারী সকল সুবিধা সহ রাষ্ট্রেীয় মর্যাদায় রেখে, কবির সব সময় খোঁজ খবর রাখতেন, এই বাড়িতে কবি সুস্থ ছিলেন এবং চলাফেরা করতে পারতেন।

কবিকে হাসপাতালের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি করে রাখা হল। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর সাথে সাথে কবির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। কবি আবার অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ এক বছর মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র মোতাবেক ১৯৭৬ সালের ২৯ আগষ্ট রবিবার সকাল ১০টায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরতরে হারিয়ে গেলেন।

“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকে মুয়ার্জিনের আজান শুনতে পায়”। গানের এই লাইন গুলি তুলে ধরে বাংলাদেশের মানুষ নজরুল ভক্ত-অনুগামীরা সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় যে, কবির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মসজিদের পাশে বাংলাদেশে কবিকে সমাধিস্থ করা হোক। বাংলাদেশ সরকার তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ সংলগ্ন স্থানে সমাধিস্থ করার ব্যবস্থা করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে নজরুলের উদ্দীপন সংগীত জাতীকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বদ্ধ করে ছিল বলে শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন এবং ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় ২১শে পদক প্রদান করেন এবং ডিলিট ডিগ্রীতে ভূষিত করেন।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে ছিলেন এবং ৭৭ বছর বয়সে সকল মায়া ত্যাগ করে অজানার দেশে চলে যান। কবিকে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের কেন্দীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রেীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। আজ তাঁর মৃত্যু বার্ষিকীতে জাতীর পক্ষ থেকে জানায় শ্রোদ্ধা ভালবাসা। (সংগৃহীত)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 biplobidiganta.com

Design & Developed By : Anamul Rasel