খন্দকার জালাল উদ্দিন:কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আল্লারদর্গা বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হিসনা নদী দূষণ মুক্ত ও সংস্কার শীর্ষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১১ টায় আল্লারদর্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক মাসিক সভায় এই আলোচনা সভা করা হয়।
প্রেসক্লাবে সভাপতি খন্দকার জালাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল আনামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবে সদস্য ও সাপ্তাহিক দৌলতপুর বার্তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেলিম রেজা বাচ্চু,দৈনিক অগ্নিশিখা দৌলতপুর প্রতিনিধি নাজমুস সাদাত খান,প্রেসক্লাবে কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক আজকের সুত্রপাত এর প্রতিনিধি আশিক ইসলাম, দৈনিক বিশ্ব মানচিত্র এর প্রতিনিধি মিলন আলী,জহুরুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক গণকণ্ঠ উপজেলা প্রতিনিধি সম্রাট আলী,ভয়েজ অফ নিউজ এর প্রতিনিধি জোহন মন্ডল।
বক্তারা বলেন,আল্লারদর্গা বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হিসনা নদী দূষণমুক্ত ও সংস্কার প্রসঙ্গে আজকের আলোচনা, মহিষকুন্ডি বাঁধের বাজার এলাকা থেকে পদ্মা নদীর একটি শাখা শুরু হয়ে প্রাগপুর,রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ মথুরাপুর- হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন ও পিয়ারপুর ইউনিয়নের আল্লারদর্গা বাজারের পাশ দিয়ে ভেড়ামারা উপজেলার মধ্য দিয়ে মিরপুর উপজেলায় গিয়ে শেষ হয়। প্রায় ১০০ কিলোমিটার লম্বা ও প্রায় ৫০০ ফিট প্রশস্ত হিসনা নদী। এই নদী প্রায় বে-দখল হতে চলেছে, ভূমিদস্যদের দখলে এবং কিছু অংশ বিভিন্ন বাজারের বর্জ ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
”হিসনা ওই নামে আর ডাকিস না, নিচে মল উপরে পানা জীব জানোয়ার নামতে মানা” রশিকতা করে এক গ্রামের কবি কথাটি লিখেছিলেন। এলাকাবাসীর জন্য নদীটি খুবই প্রয়োজন, একসময় বড় বড় ট্রলার চলতো এই নদীটির উপর দিয়ে, এটি ভারতের কলকাতা পর্যন্ত মাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার হতো। ভূরকাপাড়া সুইজ গেট থেকে একটি পদ্মা নদীর শাখা সোনাইকুন্ডির নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হিসনার সাথে মিশে হিসনাকে আরো রূপসী করে তুলেছিল, এ শাখাটিও বে-দখল।
সোনাইকুন্ডী ইংরেজদের কুঠিবাড়ি এই কারণেই তৈরি হয়েছিল, যাতায়াতের সুবিধার্থে। আজ যে আল্লারদর্গা বাজার আমরা পেয়েছি, তা এ নদীর কারণেই গড়ে উঠেছে।আল্লারদর্গা নাম করণের একটি ইতিহাস রয়েছে। ভারতের ফারাক্কার প্রভাব ও বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে নদীটিকে হত্যা করা হয়েছে। একদিন হয়তো হিসনা নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে, আজ নদীটি খালে পরিণত হয়েছে। ২০১৫-১৬ সালের দিকে এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর উদ্যোগে চামনা গ্রামের শ্মশানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীটির কিছু অংশ খনন কাজ করা হয়।
পরবর্তীতে ২০২০-২১ সালে এমপি আ.কা.ম সারোয়ার জাহান বাদশা একটি বাজেট এই নদী খননের জন্য বরাদ্দ পান, প্রায় ৬ কোটি টাকার খনন কাজ ছিল। এই খনন কাজ বাঁধের বাজার থেকে মথুরাপুর পর্যন্ত কোন রকম এসেছে, তেমন গভীর হয়নি। এলাকার সচেতন মহলের ধারণা প্রথমে সি.এস ও এস.এ. ম্যাপ পর্যালোচনা করে জরিফের মাধ্যমে নদীর জমি উদ্ধার করা হোক।
পরিবেশকে সুন্দর রাখার জন্য এই নদীটি প্রয়োজন, এলাকাবাসীর কৃষি কাজের জন্য যেমন উপকারী হবে, নদী পথে চলাচলের জন্য সুবিধা হবে। সচেতন মহলের ধারণা এই নদীর দু’পাশ দিয়ে রাস্তা তৈরি করে দেয়া যায় এবং বনজ ও ফলদ গাছের চারা রোপন করা যায়, তবে আরও সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হবে, বিনোদনের একটি পরিবেশ তৈরী হবে।
হিসনাা নদীর বেশ কয়েকটি উপ-শাখা ইতিপূর্বে লক্ষ্য করা গেছে, যেমন কুমার নদ” হিসনা নদী থেকে উৎপন্ন এই কুমার নদ সাবেক এমপি আফাজ উদ্দীন সাহেবের বাড়ির সামনে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, প্রায় মিরপুর উপজেলা পর্যন্ত। এছাড়া পদ্মা নদী থেকে সৃষ্টি আর একটা নদী হাইলি নদী বা মাথাভাঙ্গা নদী চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতে পৌঁছেছে। পদ্মা নদীর উপনদী ভেড়ামারা নিচ দিয়ে ভেড়ামারা ডিগ্রী কলেজের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, তাও প্রায় বিলুপ্ত।
হিসনা নদী ভেড়ামারা শাখার চাঁদগ্রাম নামক স্থানে জনৈক সাবেক এমপি ১০০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে, সেটি চাষাবাদ এর জন্য বিভিন্ন জায়গায় টাকার বিনিময়ে ইজারা দিয়েছেন।
হিসনা নদীর জমি উদ্ধার করে খনন কাজ করলে মানুষ খুবই উপকৃত হবে, জনস্বার্থে বিষয়টি আমাদের কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর)এমপি মহোদয়ের দৃষ্টি আর্কষণ করে তার কাছে এলাকাবাসীর বিনীত আবেদন, বিষয়টি সংসদে উপস্থাপন করে এর পুন: খননের ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হিসনা নদী দূষণ মুক্ত, সংস্কার ও দখল মুক্ত করা দাবি উঠেছে এবং এই নদী কে পুনরায় খনন করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানান এলাকাবাসী।