কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়েক হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২ হাজারেরও বেশী পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া গমসহ অন্যান্য ফসল পুড়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু বাড়িও রয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকারও বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা জানান।
রোববার (১০শে মার্চ) দুপুর ১১টায় উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী-তীরবর্তী রায়টা, নিশ্চিন্দ্র পাড়া, আরকান্দী, মাধবপুর, গোসাইপাড়া, মালিপাড়া গ্রামে পানবরজে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। পরে ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে কুষ্টিয়া সদর থানা, মিরপুর উপজেলা, ঈশ্বরদী উপজেলা ও কুমারখালি উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের আরও ৪টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনার পর কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কামারুল আরেফিন, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু, ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান মিঠু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা-দৌলতপুর) সার্কেল মহসীন আল মুরাদ মিয়া, ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহুরুল ইসলাম জহির, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বুলবুল হাসান পিপুল, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ, বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত সেটা জানা যায়নি।
উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথর ঘাট এলাকার পান বরজ থেকে এ আগুনের সূত্রপাত। পরে আগুন গোসাইপাড়া, রায়টা, মাধবপুর, নিশ্চিন্দ্রপুর পাড়াসহ আশে পাশের গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এই অগ্নিকাণ্ডে ২ হাজারের বেশি পানচাষির কয়েক হাজার পানবরজ আগুনে ভস্মীভূত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত বড় পানচাষিদের মধ্যে সেলিম, আসলামউদ্দিন, আবুল হোসেন, আশরাফ, ইনামুল, মুক্তার, মন্টু সরদার, আমিন উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, আবদুল হান্নান, ও আমিন প্রামাণিকসহ অনেকে।
বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহেলরানা পবন বলেন, এ অগ্নিকাণ্ডে পানচাষিদের ও এলাকার মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এই অঞ্চলের অর্থনীতি নির্ভর করে পান চাষের ওপর। এই ক্ষতি সহজে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, রায়টা পাথরঘাট এলাকায় পান বরজে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস ইউনিট হাজির হয়। কিন্তু বাতাসে আগুনের লেলিহান শিখার তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তা আশেপাশে তা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, কুমারখালি ও ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। প্রায় চার ঘন্টা প্রচেষ্টার পর ৫টি ইউনিট মিলে আগুন নির্বাপণ করি। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়নি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে পৌঁছায় এসময় এমপি মহোদয় ও উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতি এখনও নিরুপণ করার কাজ চলছে। যেসব চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে সবকারি নিয়ম-বিধি মেনে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।