হৃদয় রায়হান কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ;কুষ্টিয়ার মিরপুরে প্রতি বছর তামাক চাষ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলায় তামাক কোম্পানি গুলো কৃষকের মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছে। এতে ধানসহ বিভিন্ন রকমের ফসলের চাষ দিনদিন কমে যাচ্ছে।
যার ফলে অন্যান্য কৃষি পণ্য উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হয় মিরপুর উপজেলায়। তামাক চাষের কারণে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য শ্রমিক সংকটে পড়তে হচ্ছে সাধারণ চাষীদের। বিশেষ করে তামাকের উচ্চ মূল্য থাকার কারণে তামাক চাষিরা অধিক মূল্যে শ্রমিকদের কাজে লাগাই।
যার ফলে অন্যান্য ফসল উৎপাদন করতে শ্রমিক পাওয়া যায় না। বিভিন্ন এলাকায় তামাক চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তামাক চাষের জন্য প্রান্তিক কৃষকদের বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানি অগ্রিম সার, টাকাসহ নানাভাবে প্রলোভন দিচ্ছে। ফলে কৃষকরা অন্য ফসলের পরিবর্তে তামাক চাষে ঝুঁকছে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা সাতবাড়িয়া গ্রামের তামাক চাষি রশিদুল মালিথার জানান, এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা।
আর বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। খরচখরচা বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি লাভ থাকে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানি অগ্রিম টাকা ও বিভিন্ন কীটনাশক দিচ্ছে।
এজন্য কৃষকরা ধান কিংবা সবজি চাষ না করে তামাক চাষে ঝুঁকছেন। মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার তামাক চাষি জীবন আলী মন্ডল বলেন, ‘প্রতি বিঘা তামাক চাষে খরচ হয় ৪০-৪৫ হাজার টাকা।
এবং তা বিক্রি হয়ে থাকে ৮০-৯০ হাজার টাকায়। তামাক চাষে উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় আমরা এই আবাদ করে থাকি। বিক্রি শেষে মোটা একটা টাকা পাওয়ায় সেই টাকা দিয়ে ঘরবাড়ী কিংবা জমি ক্রয় কার যায়।’
মিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৩০ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি বছর তামাক চাষ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টরে। আগে এসব জমিতে গম, মসুর, ছোলা, মটর, ভুট্টা, সরিষার আবাদ হত।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও আড়াই হাজার টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকত। কিন্তু তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।এ কারণে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত ও বিকল্প লাভজনক ফসল আবাদে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তার পরও কোম্পানিগুলোর নগদ অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা দেয়ায় তার আবাদ আশানুরূপভাবে কমেনি। তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের বাস্তবতা বিবেচনা করে বিকল্প ফসল উৎপাদনে সরকারিভাবে সার-বীজ, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দিলে সাড়া পাওয়া যাবে। না হলে তামাক চাষ অব্যাহত থাকলে জেলায় প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।