দৌলতপুর প্রতিনিধি : সারা দেশের ন্যায় কুষ্টিয়া দৌলতপুরেও চলছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রদান কার্যক্রম। প্রায় আট লক্ষ জনগোষ্ঠি বসবাসের এই উপজেলায় একটি মাত্র টিকা প্রদান কেন্দ্র হওয়ায় ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন টিকা নিতে আসা মানুষজন। সেই সাথে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০ টায় টিকা প্রদান শুরুর কথা থাকলেও দূর দুরান্ত থেকে আসা মানুষজন সকাল ৮ টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দেরি করে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলে টিকা না পাবার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এমনটা করছেন বলে জানান তারা।
এদের মধ্য ভোরে ঘুম থেকে উঠেই টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যাই বেশি। উপজেলার ফিলিপনগর এলাকা থেকে বোনকে নিয়ে টিকা নিতে এসেছেন দিনমজুর আনোয়ার হোসেন(৩০)। তিনি বলেন, বোনকে নিয়ে (২৩ আগস্ট) সকাল ৬ টায় এসেছি। পরে ভিড়ের মধ্যে টিকা নিতে না পেরে দুপুর ২ টায় ঘুরে গেছি। আবার আজকে সকাল ৬ টার দিকে এসেছি। আজ ও কাল আমার যাতায়াত বাবদ পরিবহন খরচ প্রায় ২০০ টাকা করে ক্ষতি হলো। আজকেও টিকা পাবেন কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
গত ২ আগস্ট রেজিস্ট্রেশন করার পর টিকা নিতে এসে মোট ৩ দিন টিকা না পেয়ে ঘুরে যেতে হয় মরিচা ইউনিয়নের বাসিন্দা রাইছা বেগমকে(৪৫)। ২ বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে আজ তিনি তৃতীয় দিনের মতো এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানান, ১দিন কাগজ জমা দিতে পারলেও পরে কাগজ ফেরত দেওয়া হয় তাকে।
আজকেও তিনি লাইনে থেকেও আদৌ টিকা নিতে পারবেন কিনা জানেন না তিনি। টিকা গুলো আমাদের গ্রামে গ্রামে দিলে জনগণের ভোগান্তি কমতো বলে মনে করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে টিকা গ্রহণ করলেও করোনার বিস্তার বাড়বে বলেও ধারণা তার।
তবে এত ভোগান্তি উপেক্ষা করে যারা টিকা গ্রহণ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। প্রায় ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে পেরেছেন সদর আলী। তিনি বলেন, গতকাল এসে ভিড় দেখে ফিরে যাই। আজকে ভোগান্তি হলেও টিকা পেয়ে আমি খুশি।
স্বপ্নছায়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক তাশফিন আব্দুল্লাহ জানান,সাধারন মানুষের ভোগান্তি কমাতে তাঁর সংগঠনের ২৮ জন কর্মী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে অদ্যবধি এই টিকাদান কেন্দ্রে নিরলস সেবা প্রদান করে আসছে।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টি,এইচ,ও ডাঃ তৌহিদুল হাসান তুহিন জানায়, উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের ১ম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন ৩০ হাজার ৬৯৬ জন। এদের মধ্যে ২য় ডোজ গ্রহণ করেছেন ১৩ হাজার ৮৬৩ জন এবং এখন পর্যন্ত টিকার জন্য মোট রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১ লাখ ১৪ হাজার জন।
অপরদিকে দৌলতপুরে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২১৭০ জন এবং মোট মৃত্যু ৭৩ জন।
ডাঃ তৌহিদুল হাসান তুহিন আরও বলেন, এখন ১৮ বছরের ওপরে সকল নাগরিকদের টিকা দেয়া হচ্ছে। এজন্য টিকা কেন্দ্র গুলোতে ভিড় আগের থেকে বেড়েছে। টিকা নিতে আসা মানুষদের ভোগান্তি কমাতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। একটি মাত্র কেন্দ্র হওয়ায় ভিড় বেশি, আলাদা আরো একটি কেন্দ্র করতে পারলে ভিড় এড়ানো সম্ভব, কিন্তু জনবল সংকটের কারনে আলাদা কেন্দ্র করা সম্ভব না। পাশাপাশি, টিকা প্রদান কার্যক্রমে আন্তরিকতার ত্রুটি হচ্ছেনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।