দৌলতপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস
খন্দকার জালাল উদ্দীন
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ। আজ ৮ ডিসেম্বর, দৌলতপুর ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়, ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাসনের পর দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৯৭১ সালে আদাবাড়িয়ার ব্যাঙগাড়ীর মাঠ, পিয়ারপুর ইউপি’র শেরপুর, চিলমারী ইউপি’র বাজুমারা, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর ইউপি’র মহিষকুন্ডি, খলিশাকুন্ডি, হোগলবাড়িয়া ইউপি’র তারাগুনিয়া ও চামনায়, বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এই দিনে পাকিস্তানী হানাদাররা মুক্তি যোদ্ধাদের কাছে আত্বসর্মপণ করে। দৌলতপুর হানাদার মুক্ত হয় এবং থানা চত্বরে বিজয় পতাকা উড়ানোর মধ্যদিয়ে মুক্তিকামী বীর সূর্য সন্তানেরা দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত করেন।
দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত করতে পাকসেনাদের সাথে মুক্তি যোদ্ধাদের মোট ১৬টি সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। তৎকালিন দৌলতপুর থানায় পাক হানাদারদের সাথে সব চেয়ে বড় যুদ্ধ হয় ১৯ নভেম্বর, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ব্যাঙ গাড়ী মাঠে, সেখানে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২ জন মিত্র বাহিনীর সদস্য শহিদ হন। এ যুদ্ধে ৩ শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়।
২৯ নভেম্বর পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর মাঠে পাক হানাদারদের সাথে আরো একটি বড় যুদ্ধ হয়। মরহুম মেহের আলির পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব ও আমদহ গ্রামের সলেমান ফরাজীর পুত্র ওয়ারেশ আলি শহিদ হন। এ যুদ্ধে শতাধিক পাক সেনা ও দুই শতাধিক আলবদর-রাজাকার নিহত হয়।
ভাগজোত মোড় এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ শহিদ হন, তারাগুনিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন শহিদ হন, খলিশাকুন্ডি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক শহিদ হন, এসব খন্ড যুদ্ধে শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়।
কয়েক দিনের মধ্যে মুক্তি যোদ্ধাদের তোপের মুখে পাকসেনা ও রাজাকাররা দৌলতপুর থানার অভ্যন্তরে আশ্রয় গ্রহণ করে। ৭ ডিসেম্বর পাকসেনারা রাতের আঁধারে পালিয়ে গিয়ে কুষ্টিয়া শহরতলীর জগতী বটতলী এলাকায় আশ্রয় গ্রহণ করে। দৌলতপুর থেকে পাকসেনারা পালানোর সময় রাত ৯টার দিকে মুক্তিবাহিনী চামনা-আল্লারদর্গা এলাকার বর্তমান বিএটিসি’র কাছে প্রতিরোধ গড়ে তুললে রাজাকার-পাকসেনার সম্মুখ যুদ্ধে ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর গ্রামের মরহুম সামসুজ্জামান খাঁনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক নিহত হন ও কয়েকজন এলাকাবাসী আহত হন।
এলাকাবাসী তার লাশ তারাগুনিয়া বর্তমান রফিক নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে রাস্তার ধারে দাফন করেন। তাঁর নাম অনুসারে এলাকার নাম ও স্কুলের নাম “রফিক নগর” নাম করণ করা হয়েছে এবং একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে, প্রতিবছর এলাকাবাসী দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।