খন্দকার জালাল উদ্দীন: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের হলুদবাড়িয়া ঘাট পাড়া গ্রামে শোকের মাতম, জানাজা শেষে দাফন। পিটিয়ে মেরেছে বাবা-মা আত্বীয়দের অভিযোগ, ধোয়ানোর সময় ঝাটা দিয়ে পিটানোর দাগ শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট।
পরিবার সূত্রে জানাগেছে, গত কাল বুধবার ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্ত্রী সাথীর লাশ রেখে পালিয়ে যায় প্রতারক স্বামী আকাশ। নববধূর লাশ হাসপাতালে আনার পর সেটি রেখে তাঁর স্বামী, শশুর ও শাশুড়ি পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় রাতেই নববধূর শ্বশুর ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ এবং ঘটনার প্রথমিক সত্যতা পেয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
নিহত নববধূর নাম সাথী আক্তার (১৪), নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে দৌলতপুর উপজেলার হলুদবাড়িয়া গ্রামের ঘাটপাড়া শাহাদাত হোসেনের কন্যা। সাথী আক্তারের স্বামী মোঃ আকাশ (২৮) ভেড়ামারা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের খাঁপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলাম বাবু ড্রাইভার (৫৮) এর ছেলে।
৬ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সাথীকে বাবার বাড়িতে তেমন যেতে দিতেন না। বিভিন্ন সময় স্বামী, শশুর ও শাশুড়িসহ যৌতুকের জন্য সাথীকে নির্যতন করতো।
সাথীর বাবা শাহাদত জানান, স্বর্ণালংকার যৌতুক দাবি করতো শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এসব নিয়ে তাঁদের সংসারে ঝগড়া হতো, মেয়ে এসে আর যেতে চাইতো না।
গত মঙ্গলবার রাতের দিকে সাথী ও আকাশ এর মধ্যে বাগ্বিতন্ডা হয়। বুধবার দুপুরে আকাশ মুঠোফোনে সাথীর স্বজনদের বলেন, আপনার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, আপনারা দ্রুত এখানে চলে আসেন। তাকে ভেড়ামারা ১৬ দাগ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তাঁকে দেখার জন্য হাসপাতালে যেতে বলে আকাশ।
দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখে সাথীর বাবা শাহাদাত। এ সময় স্বামী আকাশ সেখানে ছিল না। সাথীর নানা আসাদুল বলেন, বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানা ভাবে আমার নাতনীকে নির্যাতন করতো। টাকা না দেওয়ায় আমার নাতনীকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল আমিন বলেন, বুধবার ১টার দিকে মৃত অবস্থায় থাকা সাথীর লাশ হাসপাতালে রেখে স্বজনরা পালিয়ে যায়। ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) এস.আই. প্রতাপ কুমার রায় বলেন, ময়নাতদন্ত ছাড়া এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা বলা যাবে না। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে আকাশের মা ও বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাথীর লাশ ময়না তদন্তের পর ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১ টার দিকে দৌলতপুর নিজ বাড়ীতে পোঁছালে, এক হৃদয় বিদারক শোকের মাতম দেখা যায়। এলাকাবাসী জানায় দালালের পাল্লায় পড়ে মেয়েটির বাল্য বিবাহ হয়, যার কারণে এই পরিণতী আমরা সুষ্ঠ তদন্ত করে আসামীদের ন্যায় বিচারের বাদী জানায়। বেলা ৩টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্থানে সাথীর লাশ দাফন করা হয়।