খন্দকার জালাল উদ্দিন : : কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলায় এখন আতঙ্কের নাম অগ্নিকান্ড। তীব্র তাপদাহসহ নানা কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটেছে অগ্নিকন্ডের ঘটনা। পুড়ে ছাই হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের সম্পদ। নিঃস্ব হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। গত এক সপ্তহে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছোটবড় প্রায় ১৫টি অগ্নিকান্ড সংগঠিত হয়েছে।
নানা কারণে এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য নেই কোন ফায়ার ষ্টেশন। ফলে আগুন নেভানোর জন্য পার্শ¦বর্তি ভেড়ামারা, মিরপুর অথরা গাংনী উপজেলার ফায়ার সার্ভিস টীমের স্বরনাপন্ন হতে হয়। এতে করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ফায়ার সার্ভিস টীম আসার আগেই অধিকাংশ সম্পদ পুড়ে সব ছাই হয়ে যায়। উপজেলায় একটি ফায়ার ষ্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও আমলাতান্ত্রিক ও জমি জটিলতার ঘুরপাকে কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ। ২০২২ সালে আগে জমির জটিলতা কেটে গেলেও ফায়ার ষ্টেশন কবে থেকে চালু হবে সে বিষয়েও স্পষ্ট কোন কথা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ফায়ার স্টেশন না থাকায় এ উপজেলার লাখ লাখ মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দিন পার করছে। সকল জটিলতা নিরসন করে দ্রুত ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবি জানা সচেতন মহল।
জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলা দেশের বৃহৎ উপজেলার একটি। ৪৬১ বর্গ কিলো মিটার আয়তনের এ উপজেলায় প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের বসবাস হলেও মৌলিখ চাহিদার অন্যতম জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তায় নেই কোন আধুনিক ব্যবস্থা। উপজেলার বড় একটি অংশ দুর্গম এলাকা হওয়ার পরও অগ্নিকান্ডসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের মত আধুনিক ব্যবস্থা এখানে নেই। ২০০০ সালের দিকে এ উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও দাপ্তরিক চিঠি চালাচালিতেই কেটে যায় অর্ধযুগেও বেশি সময়। পরে ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে দৌলতপুর উপজেলায় ফায়ার ষ্টেশন নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
তখন থেকে শুরু হয় জমি অধিগ্রহনের জটিলতা। একাধিক জায়গা অধিগ্রহনের চেষ্টা করা হলেও জমির সরকারী কম মুল্যসহ বিভিন্ন জটিলতায় ব্যাক্তি মালিকানাধিন ওইসব জমি অধিগ্রহন করা সম্ভব হয়নি। এ সময় সরকারী খাস জমিতে ষ্টেশন নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হলেও ওইসব জমিকে ঘিরে সুবিধাভোগীদের মামলার কারণে সেখানেও ষ্টেশন করা সম্ভব হয়নি।
ফলে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছরেও জমির জটিলতা নিরসন না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে সাধারন জনগণের েেমঝ।
গত ২০২২ সালে উপজেলার দৌলতপুর সদর ইউনিয়নের চুয়ামল্লিক পাড়া গ্রামের স্থানীয় সমাজসেবী মোছাঃ হাসিনা বানু ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন করার ৮২ শতাংশ জমি দান করেন এবং ওই জমির উপর একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো ছাড়া আজও আলোরমুখ দেখেনি।
স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগন জানান, দৌলতপুর একটি বৃহৎ উপজেলাই নয়, এখানে দুর্গম এলাকার সংখ্যাও অনেক। এ উপজেলায় প্রায় প্রতিদিনই ছোড় বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। আগুন নেভানোর জন্য যোগাযোগ করতে হয় পাশ্ববর্তি উপজেলাগুলোতে। পার্শ¦বর্তি উপজেলা থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ফায়ার সার্ভিস দল আসার আগেই সব পুড়ে শেষ হয়।
আগুনে দু’একটি জায়গায় সামান্য ক্ষতির উপর দিয়ে রক্ষা পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরবাড়ি, সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। আগুণে সর্বস্ব খুইয়ে পথের ফকির হয়েছেন অনেকে। সম্পদের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে তাদের জীবনের স্বপ্নগুলোও। কিন্তু দ্রুত আগুন নিভানোর আধুনিক ব্যবস্থা থাকলে হয়তো অনেক সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হত বলে ক্ষতিগ্রস্থদের ধারনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে বসবাসকৃত প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ধীর গতির উদ্যোগ খুবই দুঃখজনক। উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন নির্মাণ না হওয়ার পেছনে জমি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সাথে সাথে রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের ব্যর্থতাকেও দায়ী করেছেন অনেকে। তাদের মতে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও স্থানীয় জমি সমস্যা নিরসনে রাজনৈতিক কর্তারা আরো উদ্যোগী হলে দৌলতপুরে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন বাস্তবায়ন করা দ্রুত হত। জমির জটিলতা শেষ হওয়ায় দ্রুত বাস্তবায়ন চান দৌলতপুরের মানুষ।
গত শুক্রবার আগুণে ক্ষতিগ্রস্থ জয়রামপুর গ্রামের পানচাষি আজের আলী বলেন, এ উপজেলায় প্রতিদিনই প্রায় ছোটবড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। গত শুক্রবার আগে তার প্রায় ২ বিঘা জমির পান বরজ পুড়ে ছাই হয়েছে। ধার দেনা করে গড়ে তোলা ওই পান বরজ তার সংসারের আয়ের একমাত্র অবলম্বনই ছিল। আগুনে তার মত অনেকের ফসল পুড়ে আজ নিঃস্ব।
মহিষকুৃন্ডি ও জামালপুর গ্রামের মুলাম আলী, আব্দুল জব্বার, মকলেচ আলী, সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর তাদের বাড়িতে ভয়বহ আগুন লাগে। আগন দ্রুত আশেপাশের বাতিতে ছড়িয়ে পড়ে। পাশ্ববর্তি ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলার ফায়ার সার্ভিস দলকে খবর দেয়া হলে তারা উপস্থিত হলেও আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়ে যায়। বাড়ি ও সম্পদ হারিয়েছি। সম্পদ না থাকায় পুণরায় ঘর তুলতে পারিনি। সরকারী ভাবে এক বান্ডিল করে পাওয়া টিন দিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকমে মাথা গুজে রয়েছি। তাদের ধারনা, দৌলতপুরে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন থাকলে দ্রুত তারা পৌছুতে পারতো এবং আগুনের ক্ষতি কমানো যেত।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, একজন দাতা জমি দান করায় দীর্ঘদিনের জমির জটিলতা দুর হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় কাগজপত্র তৈরী করে সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিস দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। ষ্টেশন নির্মানে কবে থেকে কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে সংশিষ্ট ফায়ার সার্ভিস দপ্তর বলতে পারবে।
কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস দপ্তরের সহকারী পরিচালক জানে আলম বলেন, দৌলতপুর ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপনের বিষয়টি খবই গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়েছে। লোকবলও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্টেশন না থাকায় এসব কর্মীরা পার্শ্ববর্তি ষ্টেশনে কাজ করছেন। জমি দানপত্র হওয়ায় দাপ্তরিক কাগজপত্র তৈরীতে কিছুটা সময় লাগছে। মন্ত্রনালয়ের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে ষ্টেশনের অবকাঠানো নির্মান কাজ শুরু করা হবে। তবে কবে নাগাদ ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন নির্মানসহ কার্যক্রম শুরু যাবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলেতে পারেননি তিনি।